কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুমুখে থাকা প্রেমিকা ফাহমিদাকে হাসপাতালেই বিয়ে করলেন মাহমুদুল হাসান।
প্রেম-ভালোবাসার বহু শাসত কাহিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি হাসপাতালের বেডে গত ৯ মার্চ রাতে আরেক ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করল হাসান ও ফাহমিদা জুটি।
চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের প্রথম সন্তান মাহমুদুল হাসান নর্থসাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেওয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন।
স্বজনরা জানান, শিক্ষাজীবনে তাদের দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভালো লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখের স্বপ্ন ছিল চোখের কোনায়।
কিন্তু একি! এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। ফাহমিদার শরীরে বাসা বাঁধে মরণঘাতী বোন ক্যান্সার। ধরা পরার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেয়, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয়, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সি ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
এদিকে ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। চোখের জল মুছে দিতে চান। মৃত্যু যন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।
এ ঘটনায় হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তা হলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল হাসান, ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চাই। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বোঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।
অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে ওঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি।
অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালাবদল হয়। খেজুর খাওয়ানো হয়।
হাসানের ফুফাতো ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি হাসনাত মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, আমাদের ভাইয়ের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে আমার মামা ও মামি স্বইচ্ছায় হাসপাতালে গিয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
হাসানের মা শাহিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে হাসান ও ফাহমিদা একে অপরকে ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসাকে মূল্যায়ন করে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই বিয়েতে ফাহমিদার পরিবারের লোকজন খুবই খুশি বলে জানান তিনি। হাসান ও ফাহমিদার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।